বাংলাদেশের বিজয়ে নারীর অবদান
Remember how the bravehearted women of our country played an extraordinary role in our war of freedom? This 16th December, let’s take a moment and shower their soul with respect.
ব্রিটিশ বিরোধি আন্দোলন থেকে ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ। এর প্রায় প্রতিটি সংগ্রামে পুরুষের সাথে নারীরাও কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে অংশগ্রহণ করেছেন! ১৯৭১ সালে লাখো জীবনের বিনিময়ে অর্জিত হয় আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। এই যুদ্ধে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলার নারী দেশের জন্যে সাধারন বেশ ছেড়ে অসাধারন ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল! আর এভাবেই বীর নারীদের সাহসী পদক্ষেপ, সেবা ও সহায়তা আমাদের স্বাধীনতা অর্জনে রেখেছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
ছবি কৃতজ্ঞতাঃ https://dailyasianage.com/news/12269/the-women-in-our-liberation-war-tales-of-endurance-and-courage
২০১২ সালের ১৮ নভেম্বর বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা কৃর্তক প্রকাশিত একটি বিবৃতি প্রকাশ হয়। সেখান থেকে জানা যায় মোট ২০৩ জন নারী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভূক্ত রয়েছেন। কিন্তু বেসরকারি হিসাব মতে লাখো নারী প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে যুদ্ধে অংশ নিয়েছে। তাঁরা সক্রিয় ছিল কখনও সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রে, কখনোবা যুদ্ধক্ষেত্রের আড়ালে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অজানা-অচেনা আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা-শুশ্রূষা করেছেন বহু নারী। অনাহারী, অর্ধাহারী ক্ষুধার্ত মুক্তিযোদ্ধাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন কখনও মমতাময়ী মায়ের মতো, বোনের মতো! নিজেরা খেয়ে না খেয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য খাবার রান্না করে পাঠিয়ে দিয়েছেন। ঘরে আশ্রয় দিয়েছেন ।
পাশাপাশি সরাসরি যুদ্ধে অস্ত্র হাতে রণাঙ্গনে শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন অনেকেই! যেমন কাঁকন বিবি, তারামন বিবি, শিরিন বানু মিতিল, আশালতা, রওশন আরা প্রমুখ। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গোবরা ক্যাম্পে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়েছেন অনেকেই।
খেতাবপ্রাপ্ত মোট ৬৭৬ জন মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ২ জন নারী বীর প্রতীক রয়েছেন! তাঁরা হলেন মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবি ও ক্যাপ্টেন সিতারা। বীরপ্রতীক তারামন বিবিকে আমারা হারিয়েছি অল্প কিছুদিন আগেই। তিনি যুদ্ধের সময় রাজীবপুর ট্রেনিং ক্যাম্পে রাধুনী হিসেবে যোগ দেন। তখন তিনি ১৪/১৫ বছরের কিশোরী! বিথীকা বিশ্বাস, শিশির কণা পাকিস্তানি সেনাদের গানবোটে গ্রেনেড মেরে উড়িয়ে দিয়েছেন। বিথীকা বেয়নেট চার্জ করে ধরা পড়া এক রাজাকারকে মেরেছেন।
মৃণালিনী ওঝা রাজাকারের পরিবারের ভেতর থেকে তথ্য সংগ্রহ করতেন। পুরুষের পোশাক পরে যুদ্ধ করেছিলেন আলেয়া বেগম! তিনি চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা থানা কমান্ডের ইউনিট কমান্ডার হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। একাত্তরের গেরিলা যোদ্ধা আলমতাজ বেগম ছবি মুক্তিযুদ্ধ শিবিরে যোদ্ধাদের রান্নাবান্নার পাশাপাশি অস্ত্র চালনা ও গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছিলেন। বরিশালের মুলাদী থানার কুতুব বহিনীতে করুণা বেগম অন্য মহিলাযোদ্ধাদের সাথে অস্ত্র শিক্ষা নিয়েছিলেন। এই বাহিনীর অধীনে ৫০ জন মহিলা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।
ছবি কৃতজ্ঞতাঃ Rashid Talukder
পিছিয়ে ছিল না আদিবাসী নারীরাও। গবেষক আফসান চৌধুরি তাঁর ‘বাংলাদেশের ১৯৭১’ বইয়ে মুক্তিযুদ্ধে আদিবাসী নারীদের অংশগ্রহনের বিষয়ে লিখেছেন।
এছাড়াও মহিলা সংগ্রাম পরিষদের নেত্রী কবি বেগম সুফিয়া কামাল, ডঃ নীলিমা ইব্রাহীম, জাহানারা ইমাম নেতৃস্থানীয় সংগঠক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। ডঃ ফৌজিয়া মোসলেম আগরতলায় মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পের চিকিৎসকের এবং চিকিৎসা ক্যাম্প পরিচালনা করেন। নারী পুনর্বাসন কার্যক্রমের সাথে জড়িত ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ নীলিমা এব্রাহিম। নির্যাতিত নারীদের কয়েকজনের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে “আমি বীরাঙ্গনা বলছি” নামের একটি গ্রন্থও তিনি লিখেছেন।
বাংলাদেশের সংগ্রামী নেত্রী আশালতা সেন যুদ্ধের সময় নিউইয়র্কে ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে প্রবাসীদের সংগঠিত করেন।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের তথ্যানুযায়ী, মুক্তিযুদ্ধে আড়াইলাখ নারী ধর্ষিত হয়েছে! কিন্তু ওয়্যার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি তাদের গবেষণায় বলছে, এ সংখ্যা প্রায় চার লাখ ৬০ হাজার। এমনকি ৯ মাসে যে ৩০ লাখ বাঙালি গণহত্যার শিকার হয়েছে, তার ২০ শতাংশই নারী।